প্রশ্ন : আর্যভট্ট সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করো।
উত্তর : প্রাচীন ভারতীয় সিদ্ধান্ত জ্যোতির্বিদ্যার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আর্যভট্ট। তিনি ৪৭৬ খ্রীস্টাব্দে পাটলিপুত্রে জন্মগ্রহন করেন। জ্যোতির্বিদ সমাজে ইনি ‘প্রথম আর্যভট্ট নামে পরিচিত। পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে আবর্তন করে এই সত্য তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন। আর্যভট্ট খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শেষভাগে তাঁর গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচনাবলির মধ্যে তিনটি আমরা পাই। যথা (১) আর্যভটীয়, (২) আর্যাষ্টশতক এবং (৩) দশগীতিকাসূত্র।
আর্যভটীয় নামে গ্রন্থটি আর্যভটের তরুণ বয়সের রচনা বলে মনে করা হয়। ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে আর্যভটীয় প্রাচীনতম ও বিশিষ্ট গ্রন্থরূপে পরিচিত। তবে কোনো কোনো স্থলে গ্রন্থটি ‘আর্যভট্টতন্ত্র’ রূপেও উল্লিখিত হয়েছে।
আর্যাষ্টশতক রচনাটি আবার তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত- (১) গণিতপাদ, (২) কালক্রিয়াপাদ এবং (৩) গোলপাদ।
(১) গণিতপাদ— এই পরিচ্ছেদে ৩৩টি শ্লোক আছে। এখানে রয়েছে জ্যামিতিক চিত্র এবং তার ধর্ম, সুদকষা, সরল সমীকরণ, সহ সমীকরণ, দ্বিঘাত সমীকরণ, পাটীগণিতের পদ্ধতিতে বর্গমূল, ঘনমূল নির্ণয় ইত্যাদি।
(২) কালক্রিয়াপাদ— এই পরিচ্ছেদে ২৫টি শ্লোক আছে। এখানে সময়ের বিভিন্ন একক, যেমন বছর, মাস, দিন প্রভৃতির আলোচনা করা হয়েছে।
(৩) গোলপাদ— এই পরিচ্ছেদে ৫০টি শ্লোক আছে। এখানে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয় আলোচিত হয়েছে। এখানে সূর্য চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহের গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আর্যভট্ট প্রথম সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সঠিক কারণ নির্দেশ করেন। প্রাচীন ভারতের অবিস্মরণীয় গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদরূপে আর্যভট্টের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। তিনি প্রাচীন বেদাঙ্গ জ্যোতিষের প্রচলিত পদ্ধতির সংস্কার সাধন করে স্বকীয় সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম কলিযুগের আরম্ভকাল নির্ণয় করেন। আর্যভট্ট সংস্কৃত বর্ণমালার অক্ষরগুলির নির্দিষ্ট মান বিন্যাস করে তার দ্বারা সংখ্যা গণনার এক অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং নিজের গ্রন্থে তার প্রয়োগ করেন। তাঁর টীকাকারগণের মধ্যে অন্যতম হলেন লাটদেব, ও প্রথমভাস্কর।