আধুনিক রাষ্ট্রে শাসনবিভাগের কার্যাবলী আলোচনা করো।

By

আধুনিক রাষ্ট্রে শাসনবিভাগের কার্যাবলী :

আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ যেসব কার্য সম্পাদন করে থাকে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—

(1) নীতি নির্ধারণ করা :-  শাসনবিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নীতি প্রণয়ন করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থায় নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির হাতে থাকে। তাঁকে সাহায্য করার জন্য থাকেন ক্যাবিনেটের সদস্যরা। সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যথা; ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের প্রধান শাসক প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা সরকারি নীতি নির্ধারণ করে থাকেন।

(2) অভ্যন্তরীণ শাসন সংক্রান্ত কাজ :- আইনবিভাগ প্রণীত আইনগুলি শাসন বিভাগ-এর দ্বারা কার্যকরী হয়। অপরাধীকে কোর্টে হাজির করানো, কোর্টের রায় অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তির শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতির মাধ্যমে শাসন বিভাগ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করে। সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বদলি, পদোন্নতি এবং প্রয়োজনে পদচ্যুতি প্রভৃতি কার্যবলী ও শাসনবিভাগ করে থাকে। জরুরী প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করা প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

আরও পড়ুন:  ভারতের বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো।

(3) পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ :- বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে শাসন বিভাগের ভূমিকাই মুখ্য। স্বীয় রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের প্রেরণ অন্য রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধি গ্রহণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চুক্তির শর্তাদি নির্ধারণ ও সম্পাদন ইত্যাদি ও শাসন বিভাগের কাজ। রাষ্ট্রসংঘে যথাযথ উপস্থাপনার মাধ্যমে দেশের বক্তব্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এবং কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বা ছিন্ন করার দায়িত্বসহ উপরিউক্ত যাবতীয় কার্যাবলী পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

(4) সামরিক কার্যাবলী :- শাসন বিভাগের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমিকতা রক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পদাধিকারীদের নিয়োগ করেন এবং সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসাবে সেনাবাহিনী শৃঙ্খলা রক্ষা, যুদ্ধ পরিচালনা করা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে সামরিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়।

(5) আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজ :- সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে, স্থগিত রাখতে প্রয়োজনে আইনসভা ভেঙে দিতে পারেন। অধিকাংশ রাষ্ট্রেই আইনসভা প্রণীত আইন রাষ্ট্রপ্রধানের সন্মতি সাপেক্ষে আইনে পরিণত হয়। বর্তমানে আইনসভার কার্যাবলী অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনের সমস্ত দিক যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের ও নির্ধারণের দায়িত্ব শাসন বিভাগের হাতে অর্পিত হয়। শাসন বিভাগ প্রণীত এইসব আইনকে ‘অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন’ বলা হয়।

আরও পড়ুন:  কার্ল মার্কস-এর ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা করো।

(6) বিচার সংক্রান্ত কাজ :– বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই শাসন বিভাগীয় প্রধান বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। গুরুতর প্রমাণিত অভিযোগ সাপেক্ষে বিচারপতিদের বরখাস্ত করার ক্ষমতাও শাসন বিভাগের রয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করা বা শাস্তির পরিমাণ হ্রাস করা প্রভৃতি বিচার-সম্পর্কিত কাজও রাষ্ট্রপ্রধান করে থাকেন। এছাড়া শাসন বিভাগের কোনো কর্মচারীর অপরাধের বিচারও শাস্তিদানের দায়িত্ব ও শাসন বিভাগের। একে “প্রশাসনিক ন্যায়বিচার’ বলা হয়।

(7) অর্থ সংক্রান্ত কাজ :- জনমুখী বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। মন্ত্রীসভা চালিত শাসন ব্যবস্থায় কর নির্ধারণ ও ধার্য করা, অর্থব্যয়, দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ, সরকারি অর্থের হিসাব পরীক্ষা করা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এইসব অর্থ বিষয়ক কার্যাবলী অর্থ দপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

আরও পড়ুন:  ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

(8) জরুরী অবস্থা সংক্রান্ত কাজ :- কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র প্রধানের হাতে জরুরী অবস্থা-সংক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে ৩৫২, ৩৫৬, ও ৩৬০ নং ধারায় রাষ্ট্রপতির হাতে তিন প্রকার জরুরী অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শাসনবিভাগের কাজের এক্তিয়ার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মন্ত্রীসভাচালিত শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব ক্রমেই আরও দৃঢ় হচ্ছে। রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থাতেও দলীয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা থাকে।

Leave a Comment