আগ্রহের সংজ্ঞা দাও। শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর। আগ্রহের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?

By

অগ্রহ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Interest’ আর  এই শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘It Concerns’  বা ‘It matters’ | আগ্রহ বা অনুরাগ হলো বাস্তব ও কাল্পনিক কোন বস্তু বা অবস্থার প্রতি আনন্দের অনুভূতি যা ব্যক্তিকে কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে। আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে –

ক্রো ও ক্রো এর মতে : আগ্রহ হলো কোন বিশেষ বস্তু ব্যক্তি বা কাজের প্রতি মানসিক আকর্ষণ। 


আগ্রহের বৈশিষ্ট্য :

আগ্রহ হল এক ধরনের মানসিক প্রস্তুতি বা প্রবণতা। আগ্রহ সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা নিতে গেলে আগ্রহের বৈশিষ্ট্য গুলো স্পষ্ট ভাবে জানা প্রয়োজন হয়ে থাকে।  আগ্রহের বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নরূপ আলোচনা করা হলো। 


বিকাশ ধর্মী প্রক্রিয়া :  আগ্রহ সাধারণত বিকাশ ধর্মী হয়ে থাকে ।  যেমন কোনো শিশু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার আগ্রহের মধ্যেও পরিবর্তন ঘটে বা বিকাশ সাধন হয়ে থাকে।  শৈশব কালে কোন শিশুর যে আগ্রহ রয়েছে পরে তা কৈশোর কালে এসে সেই বিষয়ে বা বস্তুর প্রতি আগ্রহ নাও থাকতে পারে বা সেই আগ্রহ বিকাশ ঘটে অন্য কোন বিষয় বা বস্তুর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে শিশু।  অর্থাৎ আগ্রহ হলো একটি বিকাশ ধর্মী প্রক্রিয়া। 


বংশগত ও অর্জিত প্রক্রিয়া : আগ্রহ সাধারণত বংশগত ও অর্জিত দুই প্রকারের উপরেই নির্ভর করে। আগ্রহে বংশধারারো কিছু প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।  কারণ শিশু আগ্রহে যেমন জন্মগত প্রভাব রয়েছে তেমন বংশগত প্রভাব রয়েছে।  যেমন – কোন এক শিশুর বাড়িতে যদি গান গাওয়ার চর্চা থাকে তবে সেই শিশু শৈশব কাল থেকেই গান গাওয়ার প্রতি আগ্রহ বা অনুরাগ লক্ষ্য করা যায়।  অর্থাৎ শিশুর আগ্রহ বংশগত ও অর্জিত।


সমাজ ও পরিবেশ নির্ভর প্রক্রিয়া : শিশুর আগ্রহ তার সমাজ ও পরিবেশের উপর নির্ভরশীল।  কারণ কোন শিশু যে সমাজ ও পরিবেশের মধ্যে বসবাস করে সেই পরিবেশ ও সমাজের আচার-আচরণকে কেন্দ্র করে তার আগ্রহ  গড়ে ওঠে। এর কারণেই  গ্রাম অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের থেকে শহরা অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আগ্রহের ক্ষেত্রে এক বিশেষ  তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। 


প্রেষণা নির্ভর : আগ্রহ এর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো  প্রেষণামূলক। শিশুর আন্তরিক ইচ্ছাই হলো প্রেষণা আর প্রেষণা শিশুর আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলে এবং বাস্তব রূপ দান করে। যেমন – কোন শিশুর যদি ছবি আঁকতে ইচ্ছা করে তবে তা বাস্তব রূপ পায় প্রেষণার মাধ্যমে। 


চাহিদা নির্ভর : আগ্রহ সৃষ্টির মূল কারণই হল চাহিদা। কারণ যদি কোন শিশু কোন বিষয় বা বস্তু প্রতি চাহিদা অনুভব করে তবে সেই শিশুটি সেই বিষয় বা বস্তুর প্রতি আগ্রহ বা অনুরাগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। শিশুর আগ্রহ সাধারণত তার চাহিদার উপর নির্ভরশীল  হয়ে থাকে। 


পরিমাপ যোগ্য : আগ্রহের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল পরিমাপ যোগ্য। বর্তমানে শিশুর আগ্রহ পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন  অভীক্ষা বা পরীক্ষা ব্যবহৃত হচ্ছে। শিশুর আগ্রহ ক্রমাগত পরিমাপ করে তার বৃত্তিমূলক বিকাশ সম্পর্কে সহযোগী জানা যায়  বা বোঝা যায়। 


পরিবর্তনশীল : পরিবর্তনশীল হল আগ্রহের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আগ্রহ সাধারণত কোন ব্যক্তির মধ্যে সর্বদা একই থাকে না, আগ্রহ ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে।  আর যার ফলে কোন এক ব্যক্তি বিভিন্ন কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং তার বিকাশ সাধন করতে সক্ষম হয়। 


সেন্টিমেন্ট নির্ভর : শিশুর আগ্রহ তার সেন্টিমেন্ট এর ওপর নির্ভর করে। সেন্টিমেন্ট হলো অনেকগুলি অর্জিত পক্ষের সম্মিলিত রূপ।  যে সকল বস্তু, ব্যক্তি বা ধারণার  প্রতি শিশুর সেন্টিমেন্ট  গড়ে ওঠে সেইসব বস্তু ব্যাক্তি বা ধারণার প্রতি অনুরক্ত হয় সেই শিশু। 


উপরে আলোচনা করা বৈশিষ্ট্য গুলি ছাড়াও আরো বহু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় আগ্রহে।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল  অনুভূতিকমূলক ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য। 


আগ্রহের শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা : 

শিক্ষা ব্যবস্থায় আগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক শিক্ষায় শিশুর সামগ্রিক জীবন বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আগ্রহের সঞ্চার করা, যাতে শিশু তার জীবন পরিস্থিতির সকল অংশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর এই শিক্ষা ব্যবস্থায় আগ্রহের ভূমিকা গুলি বা গুরুত্বপূর্ণ নিচে আলোচনা করা হলো। 

আরও পড়ুন:  শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন এর গুরুত্ব লেখো। অপানুবর্তন কাকে বলে ?

মনোযোগ বৃদ্ধি : শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন শিশু মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য আগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আগ্রহ শিক্ষার্থীদের শিক্ষনীয় বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে এবং এর ফলস্বরস্বরূপ সেই আগ্রহ পড়ে মনোযোগে পরিবর্তন হয়।

সক্রিয়তা বৃদ্ধি : কোন এক শিশুকে শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় করে তোলার জন্য আগ্রহের গুরুত্ব  অপরিসীম। আর শিশুদের এরূপ সক্রিয়তা তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলে। 

নতুন কর্মে অনুপ্রেরণা : আগ্রহ শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু কাজ করতে অনুপ্রেরণা যোগায়।  নতুন কিছু সৃষ্টি করার প্রতি তাদের আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। 

দক্ষতা বৃদ্ধি : শিক্ষার্থী যদি কোন বিষয়কে  আগ্রহের সাথে ভালোভাবেই  জানে  তবে শিক্ষার্থীর সেই বিষয় সম্পর্কে নিখুত জ্ঞান অর্জন হয়ে থাকে। যার ফলে শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং সেই দক্ষতার ফলে সেই শিশুর যেকোনো কাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে পারে। 

আরও পড়ুন:  শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব | শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব আলোচনা করো।

সৃজন ধর্মী ক্ষমতার বিকাশ : আগ্রহ শিশুর অন্তর্নিহিত সৃজন ক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে তার অনুসন্ধানমূলক প্রচেষ্টায় অনুপ্রেরণা যোগায়। 

শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমী করে তোলা : আগ্রহ শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমী করে তোলে।  কোন শিক্ষার্থী কোন বিষয় নিয়ে কঠিনভাবে অনুশীলন করার ফলে সেই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়ে থাকে। 
গঠনমুখী জীবন :  আগ্রহ শিক্ষার্থীদের জীবনকে  গঠনমুখী, পরিসীলিত,  সামাজিক এবং বাস্তবধর্মী করে গড়ে তোলে। 

শিক্ষাভিমুখী প্রেষণা সঞ্চার :  আগ্রহ,  শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাভিমুখী প্রেষণা সঞ্চার করে তা  দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। 

বিষয়বস্তু নির্বাচনের সহায়তা :  শিশুর আগ্রহ তাকে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু নির্বাচনে সহায়তা করে।  শিক্ষার্থীর শিক্ষনীয় বিষয়বস্তুর সঙ্গে আগ্রহ সংযুক্ত হলে তা সে সহজে আয়ত্ত করতে পারে এবং তার অনুশীলনে অনেক বেশি সুবিধা বা আনন্দ পায়।

আরও পড়ুন:  শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন এর গুরুত্ব লেখো। অপানুবর্তন কাকে বলে ?

উপসংহার :

সর্বশেষে বলা যায় যে, আগ্রহ হলো বিশেষ এক ধরনের মানসিক সংগঠন বা প্রক্রিয়া।  ম্যাকডুগালের মতে আগ্রহ হল সুপ্ত মনোযোগ,  মনোযোগ হল ক্রিয়াশীল আগ্রহ। শিক্ষা ক্ষেত্রে আগ্রহের ভূমিকা বা গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সংগঠিত বা পরিচালিত করতে হবে যাতে কোন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে।  আগ্রহকে সাধারণত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।  যথা ক্ষণস্থায়ী আগ্রহ ও দীর্ঘস্থায়ী আগ্রহ। বর্তমানে ব্যক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রেই আগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম। 


Leave a Comment